“জলছবি”
- লেখা- হটাৎ কবি
- ছবি- ভোকাট্টা ভ্রমণ অ্যালবাম থেকে
পূর্বঘাট পর্বতমালার ঘননীল পাহাড়ের সারি,তার পাশে বিচিত্র বর্ণের সবুজের বনানী। দূর থেকে মনে হয় নীল পাড়ের সবুজ শাড়ি। দ্রৌপদির শাড়ির মত মাইলের পর মাইল জুড়ে লম্বা হয়ে হাওয়ায় দুলছে। আর সবুজের যে কত বিচিত্র বাহার! বর্ষার মেঘ আর সুয্যিঠাকুরের লুকোচুরি খেলার ফাঁকে ফাঁকে সেই সবুজ শাড়ি সবুজের যত বর্ণ বৈচিত্র আছে সেই সব রকম সবুজের ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টাচ্ছে।
![](https://bhokattaa.com/wp-content/uploads/2023/02/305538398_601478071705118_4311451473354397435_n-1024x768.jpg)
ও বাবা এটা আবার কোথায়?
আরে দাঁড়াও , আসল কথাই তো বলতে ভুলে গেছি। আমাদের ঘুড়ি ভোকাট্টা হয়ে এবার পড়ল গিয়ে ছত্তিশগড়ের বস্তারে। আসলে হাওয়ায় এত মেঘের ভার যে ঘুড়ির সুতো পটাং। সে যাই হোক ভাগ্যিস পটাং তাইনা এত সুন্দর সব দৃশ্য উপভোগ করা গেল। বর্ষাকাল তাই জলের কথাই আগে বলি। বাকি সব পরে হবেখন। প্রথমেই বলি চিত্রকূট জলপ্রপাতের কথা। পাহাড়ের মাথাটা মালভুমির মত সমতলে চলতে চলতে হঠাত সিঁড়ি ভাঙা শুরু করল। আর ইন্দ্রাবতী নদীও সেই পাহাড়ি সমতলে কুলু কুলু করে বইতে বইতে হঠাত ঝাঁপিয়ে পড়ল সিঁড়ি বেয়ে ঝড়ঝড় শব্দে। সেই পতনের ব্যাপ্তি এতটাই বিস্তৃত যে লোকে বলতে শুরু করল মিনি নায়াগ্রা। আসলে আমরা জাত কাঙাল, বিদেশের একটা কিছুর ছাপ্পা লাগালেই ভাবে জাতে উঠে গেলাম। আমি বাপু স্বচক্ষে নায়াগ্রা দেখিনি। লোকের মুখে শুনেছি আর ছবিতে দেখেছি। হতে পারে সে বিশালাকার। আমি কিন্তু চিত্রকূট দেখেই মুগ্ধ।সে তোমরা আমায় যতই কুয়োর ব্যঙ বলনা কেন। দুদিন শুধু চিত্রকূটের দিকেই তাকিয়ে থাকলাম।
“পলক নাহি নয়নে, হেরিনা কিছু ভুবনে‐–
নিরখি শুধু অন্তরে সুন্দর বিরাজে।”
![](http://bhokattaa.com/wp-content/uploads/2023/02/305968912_600036978515894_5176098819360935748_n-1024x768.jpg)
তারপর? তারপর??
তারপর আর কি, আবার ঘুড়ি বাঁধা হল লাটাইয়ের সাথে। ধীর মন্থর গতিতে সে উড়ে চলল। চলতে চলতে তিরথ্গড় জলপ্রপাতের নাচ ডঙ্কিনি আর শংখিনি নদীর সঙ্গম , তামড়া ঘুমর জলপ্রপাতের মরণ ঝাঁপ, কোডাকল জলপ্রপাতের রিমঝিম নাচ, মহানদীর ওপর গাঙ্গরেল বাঁধের করুন দমচাপা কান্না, শিলারি নদী।
নদীর উপর মুর্রুংসিল্লি বাঁধের স্থাপত্যের কারিগরি,আরও কত কি। সব কি ছাই মনে থাকে? দেখার আনন্দে দেখে যাওয়া। তারপর? তারপর আর কি? তারপর দিন ফুরালো সন্ধ্যে হল, লাটাইয়ের সাথে ঘুরি গুটিয়ে ঘরে ফেরার পালা।
![](https://bhokattaa.com/wp-content/uploads/2023/02/306815565_603528604833398_5678206353835923575_n.jpg)
![](http://bhokattaa.com/wp-content/uploads/2023/02/306273179_600722388447353_4672909335264781590_n-1024x768.jpg)
হটাৎ কবি শুধু কবিতায় নয়, ভ্রমণ কাহিনীতেও সিদ্ধহস্ত। যেতে পারিনি বলে মন খারাপ হয়েছিল,কিন্তু লেখাটা পড়ে আমার কিছুটা মানস ভ্রমণ হয়েছে। হটাৎ কবিকে অনেকে ভালোবাসা।