মারাদোনার জন্য রূপকথা

  • লেখা – সুতপা দত্ত
  • অলঙ্করণ – শুভ্রা


” বিয়ে বিয়ে আর বিয়ে, জীবনে আর কি কিছু করার নেই?ভয়ঙ্কর রাগে চিৎকার করে উঠলো মারাদোনা। মা বললেন, “তোকে দেখা করতে যেতেই হবে”। বলেই ওদের দূর্গা পাতুরি লেনের ভাঙা বারান্দা কাঁপিয়ে মা ঘরে ঢুকে গেলেন। মারাদোনা মানে মেঘবালিকা মল্লিক। জেঠিমার মতে,’তিরিশ বছরের কালো ধিঙিমেয়ে’। কলকাতার নামকরা ইস্কুলের গেমস্ টিচার ও। মা পেনশনভোগী। ফলে দুজনের দুই কামরার শরিকি বাড়িতে বেশ তরতরিয়ে চলছিল সংসার। কিন্তু দুবছর আগে করোনা হওয়ার পর মায়ের মনে বিয়ের ভূত ঢুকেছে। মা কান্নাকাটি ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ের জন্য জীবনটাকে একেবারে বিষময় করে তুলেছে ওর। চাপা নরম মানুষটাকে বকতেও কষ্ট হয় ওর। মারাদোনা, ডাকাবুকো পুলিশ বাবার দেওয়া এই ডাকনামটায় ডাকে বাড়ির লোকজন থেকে পাড়াপড়শিরাও। তবে হঠাৎ এক ভোরবেলায় বাইক অ্যাক্সিডেন্টের পরে চিরকালের মত ছবি হয়ে যাওয়া বাবাটা আর ডাকে না। বাবার মতো ফুটবল পাগল মেয়েটা মায়ের কথায় পুলিশের চাকরি নিতে পারেনি। বাবার হেলমেটে হাত বোলায় পরম মমতায়। তবু এই বাড়িতে পাড়ার ক্লাবের খুদে খেলোয়াড়দের অবাধ যাতায়াত চলে। ওদের কাছে ও মারাদোনা।

“আপনি কি অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছেন? প্যারামাউন্ট শরবতের রেস্তোরাঁয় চেয়ার টেনে বসলো মারাদোনা। এই গরমে সবচেয়ে উপাদেয় পানীয়র লোভে ওর নির্বাচিত এইখানে এসেছে মায়ের ফিচির ফিচির কান্নায় বাধ্য হয়ে। “নাহ্, অপেক্ষা
অনেক বছরের” দরাজ হাসল সামনে বসা প্রায় তরুণ ছেলেটা। জঘণ্য নায়কসুলভ হাবভাব। মনে মনে ওপর চালাক ছেলেটাকে মারাদোনা দশে শূন্য দিল। এই প্রথম নাকি কেউ যেচে বিয়ে করতে চেয়েছে ওর মত মেয়েকে! ওর বিরক্তিকে পাত্তাই দিচ্ছে না। কি অদ্ভুত সপ্রতিভ ছেলেটা। ছেলেটার দিকে না তাকিয়েই বলল, “আমার নাম মেঘবালিকা, আপনার ?” বিয়ের
ইন্টারভিউ এর মত সিরিয়াস বিষয়ে ছেলেটা হেসে বলল, “ফুসমন্তর, থুড়ি ফাল্গুন দস্তিদার”। মারাদোনার
সারা শরীর রাগে রি-রি করে উঠল। এই উত্তরের পরে
ছেলেটার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে জানতে চাইল, ” আমি কেন? ” এবার একটু থতমত খেয়েছে সে। “আমি ফুলপিসিমা থুড়ি রাঙামাসীর বাড়িতে থাকতাম। তখন ছাদে আপনাকে ফুটবল নিয়ে ডজ করতে দেখে হাঁ হয়ে গেছিলাম। বাবা মা কেউ নেই তো! তাই রাঙামেশো পাঠিয়ে দিলেন পুরুলিয়ার সৈনিক বিদ্যালয়ে। লাস্ট যখন শীতের ছুটিতে এলাম, তখন লেবুতলা পার্কের ফাইনাল ম্যাচ ছিল। ট্রাইবেকারের আপনার দুটো গোল জাস্ট কোনদিন ভুলব না”। তিনবছরের ছোট গুনমুগ্ধ সেই ভক্তকে শেষ পর্যন্ত এড়াতে পারেনি ও। বিয়ের পর ওদের দুই কামরা ঘরে রাঙামাসীর আশকারায় ছেলেটাও এসে জুটেছে আর খুদে খেলোয়াড়দের ভিড় আরও বেড়েছে। তবু মায়ের জীবনের মুশকিল আসান হয়নি। ছেলেটা পেশায় ফৌজি আর নেশায় বাইকার। এই তো হানিমুনে ওরা গেছে সান্দাকফু, মৃত্যুভয়হীন বাইকেই… রূপকথায় যেমন হয় আর কি!!!

Leave a Reply

Your email address will not be published.