গল্প- ১

খবরের কাগজের প্রথম পাতায় বেশ ফলাও করে বেরিয়েছে খবরটা। বিশিষ্ট সাংসদ পঙ্কজ বাগচীর রহস্যময় মৃত্যু। পঙ্কজ বাবুর মত দাপুটে সাংসদের মৃত্যু যে অনেকের পক্ষেই স্বস্তিদায়ক, বিশেষত শাসক দলের নেতা মন্ত্রীদের কাছে, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু শাসকদল এত কাঁচা কাজ করবে কেন? এটা নিয়ে ভয়ানক জলঘোলা হবে, এবং শুধু তাই নয় বিরোধীদল সহ গোটা রাজ্য যে পথে নেমে পড়বে সেটাও সবার জানা। পঙ্কজবাবু তো শুধুমাত্র বড় মাপের নেতাই নন, রীতিমতো সৎ ও বিচক্ষণ একজন মানুষ। ঘটনার আকস্মিকতায় গোটা রাজ্যই যেন হতবম্ভ!

সকাল থেকে প্রায় সমস্ত নিউজ চ্যানেলগুলো ওনার মৃত্যুর খবরটা কভার করতে ব্যস্ত। শেষ তাকে কে দেখেছেন, কোথায় দেখেছেন, কি অবস্থায় ও কার সাথে ইত্যাদি। ওনার বাড়ির সামনে থেকে শুরু করে ওনার ড্রাইভারের বাড়ির সামনে পর্যন্ত মিডিয়া পৌঁছে গেছে,লাইভ কভার করতে। ঠিক এই কারণেই টেলিভিশনের থেকে প্রিন্ট মিডিয়াকে বেশী প্রাধান্য দেন বিশ্বজিৎ বাবু। বিশ্বজিৎ বাবু অর্থাৎ বিশ্বজিৎ অধিকারী, আপাতত কলকাতা পুলিশের আসিস্টেন্ট কমিশনারের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তবে এখনও কোন জটিল কেস এলেই ওনার ডাক পরে। নিজের জীবনে বহু জটিল কেসের মীমাংসা করে খ্যাতির শীর্ষে থাকা অবস্থায় হঠাৎ কেন ইস্তফা দিলেন সেটাও একটা রহস্য! আপাতত তিনি মনোযোগ দিয়ে খবরটা পড়ছেন। কাগজে লিখেছে, গত পরশু রাতে পঙ্কজবাবু ডিনার সেরে নিজের ঘরে শুতে চলে গিয়েছিলেন, দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করেছিলেন বরাবরের মত। ওনার খুব ভোরে উঠে হাঁটার অভ্যাস, এই নিয়মের কোন হেরফের হয় না। কিন্তু সকালে অনেক বেলা হওয়া সত্ত্বেও উনি উঠছেন না দেখে ওনার সেক্রেটারি বিমল বাবু চিন্তিত হয়ে পড়েন। দরজায় ধাক্কা দেওয়ার পরও দরজা খোলেনি দেখে বাড়ির বাকি লোকজনদের ডাকা হয়। সকলে মিলে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখেন, উনি খাটের পাশে ইজি চেয়ারে বসে আছেন আর ঘাড়টা বাঁ দিকে হেলে আছে। সবাই মিলে ধরে খাটে শুইয়ে দিয়ে ডাক্তারকে খবর দেয়। ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে বলেন উনি মারা গেছেন, খুব সম্ভব সেটা ৬-৭ ঘন্টা আগে, মাসিভ হার্ট অ্যাটাক। বডি পোস্ট মর্টেম এ পাঠানো হয়।

এই পর্যন্ত পড়েই বিরক্তিভরে বাইরের দিকে তাকান বিশ্বজিৎ বাবু। আবার ধরাধরি করতে গেল কেন! তাঁর ডিটেক্টিভ ইনস্টিনক্ট বলছে ব্যাপারটা সাধারণ হার্ট অ্যাটাক হয়ত নয়। অথচ এই ধরে নিয়ে যাওয়াতেই কিছুটা এভিডেন্স নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকতে পারে। বডি পোস্ট পোর্টেমের জন্য নিশ্চয়ই চলে গেছে এতক্ষনে। ড: পাকরাশিকে ফোন করলেই সব জানা যাবে। ফোনের দিকে হাত বাড়াতে গিয়েই মনে পড়ে যায়, আরে আমি তো আর গোয়েন্দা বিভাগে নেই! চোখ থেকে চশমাটা খুলে বাইরের দিকে তাকান বিশ্বজিৎ বাবু। ACP পদে থাকলে এতক্ষনে ফোন ধরতে ধরতে জেরবার হয়ে যেতেন। একটু বিষন্ন হাসি খেলে গেল তাঁর অধরে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশেটা যেন তারই মনের প্রতিচ্ছবি। হঠাৎ তাঁর ল্যান্ডলাইনটা বেজে উঠল। মুচকি হেসে ফোনটা ধরেই বললেন, আপনার ফোনেরই অপেক্ষা করছিলাম মল্লিকবাবু। খবরের কাগজে সব পড়লাম, অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ওপাশ থেকে গম্ভীর গলায় মল্লিকবাবু বললেন, স্যার, আমি জানি আপনি এইটুকু তো বুঝেই গেছেন যে মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়, কিন্তু সেটা বলার জন্য ফোন করিনি। আরও একটা ঘটনা ঘটে গেছে। অবাক হয়ে বিশ্বজিৎবাবু জিজ্ঞাসা করলেন, কি হয়েছে?

মল্লিকবাবুঃ পঙ্কজবাবুর ডেডবডি পোস্ট মর্টেম এর জন্য পাঠিয়ে দেওয়ার পর পুলিশ ওনার বাড়ি সার্চ করে সীল করে দেয় এবং বাড়ির সকলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। থানায় আসার পরে দেখা যায়, ওনার সেক্রেটারি বিমলবাবু মিসিং।

বিশ্বজিৎবাবু : মিসিং? সেটা কিকরে সম্ভব? তোমরা ওনাদের কি তোমাদের সাথে করেই থানায় আনছিলে?

মল্লিকবাবু : হাঁ স্যার, সকলেই গাড়ি থেকে নেমেছিল, কিন্তু তারপর জিজ্ঞাসাবাদের সময় দেখা যায় উনি নেই। সাথে সাথে ওনাকে খোঁজা শুরু হয়। এবং একটু আগে কাজীপাড়া পি. এস থেকে ফোন আসে, কাজীপাড়া রেল কলোনীর কাছে লাইনের ধারে একটা লাশ পাওয়া যায়। আমরা গিয়ে বডিটাকে ইডেন্টিফাই করি, সেটি বিমলবাবুর লাশ। সারা শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই এমনকি কারো সাথে মারপিট করারও কোন লক্ষন নেই। কেন বা কিকরে ওখানে গেলেন কিছুই বুঝতে পারছি না। বডি পোস্ট মর্টেম এর জন্য পাঠানো হয়েছে। স্যার, আপনার হেল্প চাই, একটু আসতে পারবেন।

বিশ্বজিৎ বাবু : আমি আসছি মল্লিকবাবু, আপনি তৈরী হন, আকুস্থলে যেতে হবে। বিমলবাবুর লাশ যেখান থেকে পাওয়া গেছে সেই জায়গাটা সিল করার ব্যবস্থা করুন।

মল্লিকবাবু : ওকে স্যার।

তারপর ? গল্পটা শেষ করতে হবে আপনাকে ? লিখে ফেলুন আর পাঠিয়েদিন আমাদের। আমরা আপনাদের লেখার অপেক্ষায় রইলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published.