একটি প্রণয় কথা ….. ” স্বাহা ও অগ্নি “

  • লেখা- প্রিয়াঙ্কা সরকার
  • অলঙ্করণ- শুভ্রা হালদার

পৌরাণিক প্রেমের মান অভিমান ছুঁয়ে একটু সাধারণী সাধ, প্রণয়ের পাশায় আঁকা স্বাহা ও অগ্নি। হাজার কাজের ফাঁকে কৃত্রিম হাসিটা  বুক ভাঙা প্রণয়ের কোলে  মাথা রাখতে চায়; কি জানি! ইচ্ছামত তো বলতে চাই, ” তুমি কি জানো না,  তোমাকে লোকবলে আমার কাছে আনতে, বুক ফেটে যায়!  তবে কি যন্ত্রণাটা আলগা পিরীতের নামাবলী! ” পুরুষ শতেক কাজে মেয়েলি অভিমানে দোষারোপ করেই কি তবে, অগ্নি প্রজ্জ্বলন করে! এমনটাই তো উচ্ছিষ্টের বুক চুঁয়ে পড়ে,ভালোবাসার রাশি ভার৷ সুপ্ত তৃপ্তি তো অভিমানটাও স্বাহা -এ বুকে আছড়ে পড়ে, কিন্তু তার সেই মানুষটার গরজ কই!  
 চিরকালীন শোক সংবাদ আছড়ে এসে চিৎকার করে… ” ফুরিয়ে গেছি আমি ” ; অসামান্য আকুতির মোহ আঁকড়ে স্বাহা বলে, ভালোবাসা যে তাগিদ তা তো অগ্নির কাছেই শেখা। নিবিড় বাহুবন্ধন, মুখরিত আকুতি আর আউলে বাউলে চুম্বন.. মধুপ গুঞ্জন…  প্রেমাহুতি।  ওসব অগ্নির কাছে আজ পুরানো ঘ্রাণ; বিশ্বাসের টানে ভয়ার্ত বিবাদটা আজ স্বাহার নিশানায় তীব্র আক্ষেপ৷ নিক্ষেপের তীরে আহত স্বাহা র কাছে অগ্নি তো কারক। তবু সন্ধির মূলে অগ্নির যেন কেমন একটা সন্দেহের গন্ধ। আশঙ্কার দূতী, কথক হয়, বলে, ” কেন!  কেন আজ সন্দেহের মোচড় বুকে!  এ আস্ফালন, এ আকাঙ্ক্ষা, মনগড়া নয়৷ তবে চোখের জলে আজ কি  আবার ” অগ্নি” কে চেনার আকাঙ্খা!! 
 পাওয়ার যখন তাগিদ নেই, তখন হারানো কথাটি তো মিথ্যা অভিমান৷ দখলের যখন জেদ নেই, তখন স্বপ্ন ঘেরা প্রেমের আসক্তিটাই মিথ্যা। অগ্নির কাছে, স্বাহা যে কোনোদিন ” তার ” হতে পারে নি। আদরে আবদারে, কথার ফাঁকে স্বাহা বুঝিয়ে দিয়েছে, না, সে লুকানো আগুন। কিন্তু ভিত্তি যে, হারায় না। হুতাশনের আগ্রাসী মনন আজ নিঠুর বোধে স্বাহাকে হারিয়ে দিয়েছে৷ ধরা পড়ে গেছেন অগ্নি৷ তাগিদ যদি দূবর্লতা হয়, তবে আঁকড়ে স্বাদ গ্রহণের স্বীকার কেবল স্বাহার স্বগোতক্তি।  এই দীঘির জলকে আঁচলা করে পান করতে পারেন নি অগ্নি। ভয় হয়েছে, অগ্নির ; কামনা বাসনায় সে তো পুড়িয়েছে, নিজেকেও পুড়িয়েছে, কিন্তু শিকলে বাঁধা সম্পর্কের বাঁধনে ধরা দিয়েছে… এটা নিয়তি। আচ্ছা ” অগ্নি!  তুমি কি পতঙ্গ ঝাঁপ দেখেছো!  ” খেলেছে, হৃদয় অবহেলার রক্ত বঞ্চনার অসুখে স্বাহা, আজ অনুরূপ “স্বাহা ” ইন্ধন। না, আজ আর সার্থক ইন্ধন নয়, একদিন ফুরিয়ে যাবে, আসবে চিরন্তনী বৃত্তি। আজ খুব বলতে ইচ্ছা করছে নিজের ভাষায়…
হৃদয়ের নাদে ভরে আছে বাঘিনী চাপা হুঙ্কার; মুখোমুখি পথে প্রশ্রয় ভরা উজ্জ্বল আলো… প্রসাধনী সুরভির মতো তরুণী গাছ, অঙ্গনের বুকে পর্ণকুটির, ঋষিকুমার  আহ্বান।।
 অগ্নির জীবনে অপ্রকাশ্য আতঙ্ক, যেন মননে কার্যকারণ সম্পর্কের পাক; তবে কি সঠিক ঈর্ষার বাইরে মোহগ্রস্ত করুণা নিয়েই স্বাহার আজ কাঙালিপনা! আসলে পুরুষের চোরাগোপ্তা ভয়ে মিশে আছে, লুকোচুরি প্রতারণা৷ স্বাহা বুঝিয়ে দিয়েছে,ভালোবাসার প্রতি দুর্বলতায় তাঁর বিন্দুমাত্র অভিযোগ নেই; বরঞ্চ অগ্নির কাছে এটা চরম পাওয়া৷ কিন্তু প্রতারণা কি ভালোবাসার অর্থ বোঝে! 
 আসলে এখানে ” পাশবিক ” শব্দটাও পশুকে অপমান করা হয়৷ কথার মর্মার্থ অনুভব তো অগ্নির মধ্যে নেই। অগ্নির অস্বস্তি,  ” তুমি কি কেবল ঝগড়াই করবে! ” স্বাহা বুঝিয়ে দেয়,  ঝগড়াঝাটি যখন সম্পর্কহীন, তখন আর তিক্ততার পানপাত্র চুমুক দিয়ে কি লাভ! আসলে যন্ত্রণা যে দুঃসহ আত্মগ্লানি, তা মর্মে মর্মে অনুভব করে স্বাহা। অশ্লেষে নিভু নিভু আলোয়, স্বাহাকে ভালো লাগে না অগ্নির৷ তাঁর বুকে সপ্তর্ষির স্ত্রীকে মনে পড়ে। আজ লোভী অগ্নি৷ সে মনে মনে চায় “শ্রদ্ধা!  তুমি কেন বলো, বলো, কেন তুমি অঙ্গিরায় প্রেয়সী হলে!  কেন তুমি আমার নও!!” অগ্নি নিজের শরীরে তাপ অনুভব করে। উথাল পাতাল ভরা নদীতে কেবল শ্রদ্ধার শরীর স্বপ্নে আসে৷ এ যেন শরীর ছোঁয়া রক্ত অনুভব, অস্তিত্ব, অনস্তিত্ব সব৷ আকুতির অনুভবে এ সুখ যেন কেবলই আকর্ষণ।  
 অন্ধকারে স্বাহার প্রেম তখন শ্রদ্ধার রূপান্তর। ঠোঁটে ঠোঁট রেখে অবদমিত কামের ঘরে স্বাহা বলতে থাকে, লজ্জার বুকে দরজা এঁটে অগ্নি, তুমি তো আসঙ্গসুখ মিটিয়েছো, এখন অদেখায় অনুভব হোক সেই সঙ্গসুখ। লালিত্য, শিহরণ, বিভোরতার উপচে পড়া ভরা নদী চাউনি, সে বেহায়াপনা খুব দেখতে সাধ হয় তার।  অগ্নির স্মৃতি ছুঁয়ে আজ কেবলই অট্টহাসি সাজ৷ মনে পড়ছে শব্দ চেতনার গুণ৷ কিন্তু অগ্নি কি জানে, হবির্ভূর স্ত্রী ক্রতু সাজ সবটুকুই স্বাহা৷  আজ স্বাহা নারীব্যক্তিত্বে অগ্নির ভিন্ন ভিন্ন ভ্রম। কি বোকা অগ্নি। যৌনতার কান্নায় এতো রৌদ্রস্নান যদি এক হয়, তবে দ্যুতি তো ভিন্ন নারীর ভিন্ন… তাও কি অগ্নি বোঝে না!
 “ওগো!  ঘুমভাঙানিয়া, তুমি এলে ভাঙল আমার ঘুম”  আসলে নির্লজ্জ হওয়াতে পুরুষের দুঃখ নেই৷ অশরীরী গলায় রূপের আগুনে ঝাঁপ, না অনুশোচনায় আজ পরস্ত্রী সঙ্গ সাজ। স্বাহা জানায়, পরস্ত্রীরা এমন সত্য আভরণের সাজি সোহাগে অগ্নিকে দেখলে অভিসম্পাত দিতো। বহুরূপ ধরে হরিণী মাংস স্বাদ হয়েছেন তাই স্বাহা। আশ্চর্য যে, পন্য মেয়ের মতো অগ্নি কেবল স্বাহা কে ভোগই করেছে, কিন্তু যাপনের স্বরটুকুও চিনতে পারে নি। আজ তো আর কৈফিয়ত দেওয়ার কিছু নেই। বহুরূপী মক্ষীরানী তিনি৷ না, স্বপ্নের অনুসূয়া স্বপ্নেই থেকে গেছে৷ অপমানে, লজ্জায় পরাভবের গ্লানিটা অপদস্ত হয়েছে বারবার। এবার কান্নায় ভেঙে পড়লেন অগ্নি। কিন্তু না, নারীর কাছে এমন অগ্নির প্রাণ তো সম্মোহিতের মতো। মিথ্যা আস্ফালনে রতি ক্রিয়াতে মেতে উঠতেই, স্বাহা, অগ্নির  বাহুডোর থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেলো। আর নয়!  আর প্রতারণা মানা যায় না; নীরব প্রত্যাখানের জ্বালা এবার সরে গেছে বহুদূরে। আশাভঙ্গ হয়েছে মন৷ রাক্ষুসে অবাধ রাত্রি আজ সচল মহাদেব আবার।। 

তথ্যঋণ- 

পৌরাণিক অভিধান 
পৌরাণিক প্রেমকথা – ডঃ দীপক চন্দ্র

One thought on “একটি প্রণয় কথা ….. ” স্বাহা ও অগ্নি “

  • October 10, 2020 at 9:18 pm
    Permalink

    Wonderful

Leave a Reply

Your email address will not be published.