“নষ্ট ঈশ্বরের হাত”…পাঠ প্রতিক্রিয়া

বইটি পড়ে প্রতিক্রিয়া লিখছেন তোর্সা মৌলিক।

প্রথম গল্প… মাইলিত্তা …..

ব্যবিলন, ৪৬৫ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ। গল্পের সারমর্ম এই যে কুমারী মেয়েদের জীবনে অন্তত একবার এই দেবী মাইলিত্তার মন্দিরে এসে বেশ্যাবৃত্তি করতে হয়। অচেনা কোনো পুরুষ এসে পছন্দের মেয়েদের কোলে রূপার মুদ্রা ছুড়ে দেয় এবং মেয়েটিকে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় সেই পুরুষের সঙ্গে রাত কাটাতে হয়। এইরকম ভাবেই একটি মেয়ের ঘটনা যে কিনা সম্পূর্ণ অনিচ্ছার সঙ্গেই একজন পুরুষের সঙ্গে যেতে বাধ্য হয় এবং কাহিনীর শেষে সেই পুরুষটির ভয়ঙ্কর মৃত্যু এবং মেয়েটির আর কোনও খোঁজ না পাওয়া …. লেখক মশাই কিন্ত জানেন এবং আমরাও যারা পাঠকবর্গ তারাও জানি কে মেরেছে লোকটিকে। কিন্ত কেন? কে বা কারা মন্ত্র পাঠ করছে ? কিসের প্রতিশোধ ? উত্তর নেই… প্রথম গল্প টি পড়েই একগুচ্ছ প্রশ্ন.. কিন্ত এটুকু বোঝা যাচ্ছে চরম যৌন অত্যাচারের শিকার সেই যুগের নারী। একটু বোরিঙ লাগলেও সাহস করে দ্বিতীয় গল্পে এগোচ্ছি।

দ্বিতীয় গল্প … প্রিয়াপাস

৩০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ, রোম। রোমের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েরা বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে সহবাস করে নিজের কুমারীত্ব নষ্ট করতে পারবে না। বিয়ের পর প্রথমেই তাদের প্রিয়াপাসের মন্দিরে এসে প্রিয়াপাসের উত্থিত লিঙ্গে নিজেদের যোনি প্রবেশ করিয়ে কুমারীত্ব নষ্ট করতে হবে। এই নিয়মের অন্যথা করে জুলিয়া আর সেকারণে তার উপর হয় জঘন্য যৌনাচার এবং তাকে পুড়িয়ে মারা হয়। কিন্ত কোন এক অদ্ভুত উপায়ে আগুন থেকে উঠে আসে জুলিয়া এবং অত্যাচারী পুরুষদের পুড়িয়ে মারে… ভালোই লাগবে পড়ে। কিন্ত যথেচ্ছ যৌনতার বিবরণ আছে কাহিনীর পরিস্থিতি বোঝাতে। তবে একটাই কথা বলব, লেখক মশাই একটা সুন্দর বার্তা দিতে চেয়েছেন… যেখানেই নারীর উপর এত অত্যাচার সেখানেই কিন্ত শেষ পর্যন্ত নারীই শাস্তি দেন। আমরা নারী শক্তির পূজা করি কিন্ত সত্যিই কি ঘরের নারীকে এতটা সম্মান করি? এটা লেখক মশাই আমাদের মানে পাঠকবর্গের কাছেই প্রশ্নটা রেখেছেন।

তৃতীয় গল্প… প্যান…

গ্রীস, ১৪৮ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ। যথেচ্ছ যৌনাচারের দেবতা এবং এখানেও ভোগ্য সেই নারী। অসম্ভব যৌন অত্যাচার করে সেই নারীর মুন্ডচ্ছেদ। এরপরই অদ্ভুত এক ঘটনা, সেই অত্যাচারীত মুন্ডহীন নারীই প্রতিশোধ নিল। এই তিন গল্প মিলিয়েই শুরু হচ্ছে মহানগর, ১৯০৫। পরপর বেশ্যা খুন এবং খুনের আগে প্রবল যৌনচার। কিন্ত কেন খুন? কে এই লোক যে এভাবে নৃশংস খুন করছে? দেওয়ালে রক্ত দিয়ে আঁকা ওইসব অশ্লীল নক্সার মানে কি? সিলিন্ডার আকারের পাথরের মূর্তির মানে কি? ইন্সপেক্টর সতীশচন্দ্র নাজেহাল তার টিম নিয়ে, কোন অজানা ঈশ্বরের প্রসঙ্গ উঠে আসছে প্রতিটা খুনের পিছনে? সত্যিই কি কেউ প্রাচীন কোন উপাচারের সঙ্গে যুক্ত? কী ধরনের নৃশংস যৌনতা এইসব? ২ বছরের বন্ধ ঘরে মৃতদেহ কিভাবে? কী স্বপ্ন দেখার পর ইন্সপেক্টর সতীশচন্দ্র কেসটা ক্লোজ করে দিলো? সত্যিই কি আমরা ভবিষ্যত থেকে অতীতে ফিরতে পারি? সব কি আর কেন উত্তর হয়তো হয় না। অনেক প্রশ্নের সত্যিই কোনো সঠিক উত্তর পাঠক বর্গেরও কি জানা আছে?

অবশ্যই লেখক মশাই এর অনবদ্য সৃষ্টি অমরেন্দ্র চক্রবর্তী স্যার – চরিত্রটি। ওনার মাইথোলজি যা আমাদের নিয়ে যাবে সূদুর রোম, ব্যবিলন আর গ্রীসের অতি প্রাচীন গুপ্ত ইতিহাসে যেখানে দেবতা পূজার নামে চলত যথেচ্ছ যৌনাচার। এই বইয়ে নারীর উপর যৌনাচারের পুনাঙ্খপুঙ্খ বিবরণ আছে কিন্ত এই বিবরণকে কেউ অশ্লীল দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে যদি একটু ভেবে দেখেন যে সূদুর অতীত থেকেই নারীকে সংস্কারের নামে কি সাংঘাতিক নরক যন্ত্রণার শিকার হতে হয়েছে, তাহলে ভয়ে শিউরে উঠবেন। শেষে একটাই কথা বলবো নারীকে সম্মান না করে শুধুমাত্র ভোগ্য পণ্য হিসাবে পরিগণিত করলে তার পরিণতি কত ভয়ঙ্কর হতে পারে তার কিছু সামান্য উদাহরণই এই বইয়ের মাধ্যমে লেখক মৃগাঙ্ক চক্রবর্তী পাঠকবর্গের কাছে প্রতিস্থাপিত করেছেন। শুধু মা দূর্গা আর শ্যামা মায়ের পূজা করলেই হবে না। দৈনন্দিন সমাজ ব্যবস্থায় নারীকেও সেই আসনে বসাতে হবে বৈকি।

নষ্ট ঈশ্বরের হাত… লেখক মৃগাঙ্ক চক্রবর্তী … প্রকাশনী মাথা মোটার দপ্তর…. মূল্য ২০০ টাকা…

Leave a Reply

Your email address will not be published.