পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে

  • লেখা- সায়ন ভট্টাচার্য
  • অলঙ্করণ- শুভ্রা

নাটকের শুরুতেই জঙ্গলের পশু পাখিদের উদ্দাম নৃত্য ও গান। মানুষের তৈরি কৃত্রিম অক্সিজেনের সিলিন্ডার তারা বহু কষ্টে চুরি করে আনতে সক্ষম হয়েছে বলে উদযাপন করছে। বাঘ, কুমীর, বাঁদর, বাজ পাখি। নাচ গানের রেশ মিলিয়ে যেতে নিজেদের মধ্যে গল্প গুজব চলছে।

বাঘঃ ওহ!! আজকের অভিযান চূড়ান্ত ভাবে সফল। একবারে ১০০ লিটার অক্সিজেন হাতানো গেছে। ওহ!! মনটা পুরো হালুম(খুশি) হয়ে গেছে। এবার অন্তত কিছুদিন বেশ নিশ্চিন্তে থাকা যাবে, কি বল ভাইটু? 

বাঁদরঃ না স্যার এখনই নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে না। জঙ্গলে খাবার দাবার শেষ হয়ে আসছে। কিছুদিন পরেই বাইরে বেরোতে হবে। আর জঙ্গলের বাইরে বেরোলেই অক্সিজেন লাগবে। এই জঙ্গলটাও তো শেষের দিকে। আবার নতুন জঙ্গল খুঁজতে হবে, সেই অসময়ের জন্য আমাদের এখন থেকেই ভাবা উচিত।

বাঘঃ হ্যাঁ সে তো জানি ভায়া। আমাদের সুন্দরবনের জঙ্গলটাই কেমন হাপিশ হয়ে গেল। মনে বড্ড হালুম(দুঃখ) হয়। ঠাকুরদার কাছে শুনেছিলাম, তাদের ছোটবেলা কত আনন্দে কেটেছে… আহাহাহা…সেই ম্যানগ্রোভ… সেই নদী… আহাহা… রাজা রাজা আমরা ছিলাম রাজা; আর এখন… (দীর্ঘশ্বাস পড়ে)।

কুমীরঃ সেখানে তো আমাদের পূর্বপুরুষরাও থাকত শুনেছি। জলে কুমীর আর ডাঙ্গায় বাঘ। এখন জলে তো আর থাকাই যায় না।  যা দূষণের মাত্রা; ছানা পোনা নিয়ে দুদিন পর কোথায় যাব কে জানে।

বাজঃ ভাবো তো মোবাইলের টাওয়ার আজ 50G, কয়েক বছর আগেও আকাশে ছোট পাখিদের দেখতে পাওয়া যেত। এখন তারা সম্পূর্ণ ভ্যানিশ। আমরা এখনও কষ্ট করে টিকে রয়েছি কিন্তু আমার ছানারা? তাদের কি যে হবে ভবিষ্যতে কে জানে;

বাঁদরঃ ওঁরা খেতে পাবে না স্যার। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তব। সাপ ব্যাঙ ইঁদুর থাকবে না  কারন ওদের খাদ্যই তো নেই। বাস্তু তন্ত্র পুরো ঘেঁটে ঘ। আমরা কেউই খেতে পাবো না। খাদ্য শৃঙ্খল ভেঙ্গে পড়েছে স্যার, কোটি কোটি প্রজাতির জীব অবলুপ্ত হয়ে গেছে শেষ কয়েক দশকে। আমরা আর কদ্দিন ?  

বাঘঃ আহা, ভাই লোক তোমরা এত হালুম (মুষড়ে) হয়ে পড়লে কি করে চলবে বলতো। বেঁচে যদ্দিন আছি, চেষ্টা তো আমরা করেই চলেছি; কি বল হ্যাঁ? আরে come on..  cheer up.. আজ আনন্দ করার দিন, এই সব নিয়ে মন খারাপ করলে চলে? Let’s halum(party) all night…

কুমীরঃ আচ্ছা! তোমাদের কাছে আমার একটা প্রস্তাব ছিল।

সকলেঃ হ্যাঁ হ্যাঁ বলো বলো বলো…

কুমীরঃ দেখো আজ আমাদের মিশন ‘অক্সিজেন চুরাও’ সফল হয়েছে, সেই আনন্দে আমরা সবাই বেশ মজা করছি। তো এই উপলক্ষ্যে আজ আমরা সকলে একটু ইয়ে … (ইতস্তত ভাব মনে) মানে বলতে চাইছিলাম… একটু… বিশুদ্ধ পানীয় জল সেবন করতে পারি ?? সেই শেষ কবে বিশুদ্ধ জল পান করেছিলাম মনে করতে পারছি না।

সকলেঃ কি বলছ কি ? মাথার ঠিক আছে তোমার?

বাঁদরঃ না স্যার, ওটা সম্ভব নয়। সেই জলও বহু কষ্টে মানুষের থেকে চুরি করে নিয়ে এসে সযত্নে রাখা আছে কেবল মাত্র শিশু ও রোগীদের জন্য। আমরা স্রেফ নিজেদের আনন্দের জন্য তাতে ভাগ বসাতে পারি না স্যার।

বাজঃ (কিছু আন্দাজ করে নিয়ে খুব নিচু স্বরে) এই… এই… সিলিন্ডারটা লুকিয়ে ফেলো জলদি, কেউ এদিকেই আসছে। অক্সিজেন আবার হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। কুইক কুইক জলদি।

(বাঁদর আর কুমীর দুজনে মিলে অক্সিজেন সিলিন্ডার লুকানোর চেষ্টা করে কিন্তু প্রায় সঙ্গে সঙ্গে হাতির প্রবেশ হয়। কুমীর সিলিন্ডার আড়াল করে দাঁড়িয়ে যায়। )

হাতিঃ ভাগ বসানো নিয়ে কি যেন কথা হচ্ছিল হে ছোকরা? অ্যাঁয়?

সকলেঃ ভাগ? কী ভাগ? কিসের ভাগ?  

হাতিঃ আমি যে শুনলাম এখানে আসতে আসতে… তোমরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করছ। তা আমার ভাগটা গেল কই অ্যাঁয়?

বাজঃ কিসের ভাগের কথা বলছ খুড়ো? আমাদের আছেটা কি যে ভাগ করে নেবো বা তোমাকে তার ভাগ দেবো?

হাতিঃ অ্যাঁয় গো ন্যাকা মানিক আমার, কিছুই বুঝতে পারছে না। ভেবেছিস কি আমি কিছু খবর পাইনি? আমি জানি তোরা আজকে ওই মানুষের গবেষণাগার থেকে অক্সিজেন চুরি করে এনেছিস। আমি সেই অক্সিজেনের ভাগ চাই অ্যাঁয়।

বাঘঃ আরে কাকা তুমি আচ্ছা হালুম(ঝামেলা) শুরু করলে তো। এসব ভুলভাল খবর কোথা থেকে যে পাও কে জানে। বয়স হচ্ছে তো মাথার ঠিক নেই তোমার।

হাতিঃ চোপ রাও… আমি মহাকাল… অ্যাঁয়… আমার সাথে বেশি প্যাঁয়তাড়া কষতে আসবিনে বলে দিলুম। আমার কাছে পাক্কা খবর আছে… ওকি ওকি কুমীরের পেছনে ওটা কি অ্যাঁয়? ওই তো… ওই তো সিলিন্ডার… ওই তো…

কুমিরঃ এক পা ও এগোবেনা খুড়ো। নইলে রাম কামড় বসাবো তোমার পায়। বহু কষ্টে এটা আমরা নিয়ে এসেছি। তুমি একাই আমাদের ১০জনের অক্সিজেন শেষ করে দেবে। এটা আমরা তোমাকে দিতে পারবো না।

হাতিঃ অ্যাঁয় কি বললি? আমি এই জঙ্গলে সবার অবিভাবক… আমি মহাকাল… আর আমার মুখের ওপর কথা? দাঁড়া এখুনি তোকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেবো। দেখি তোকে কে বাঁচায়।

বাঘঃ হালুম…… (বাঘ গিয়ে হাতির পথ আটকায়) হুঁশিয়ার… কাকা… অক্সিজেনটা আমাদের বড় দরকার কাকা… ওটা না থাকলে আমরা বাইরে বেরোতে পারবো না, খাবার সংগ্রহ করতে পারব না। তুমি ওটায় শুঁড় দেবে না।

হাতিঃ আমি কি এমনি এমনি অক্সিজেন খুঁজতে এসেছি অ্যাঁয়? বউটা খাবারের খোঁজে মানুষের ক্ষেতে ঢুকেছিল, তাড়া খেয়ে দৌড়ে দৌড়ে হাঁফ ধরেছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ওই অক্সিজেন আমার চাই অ্যাঁয়।

বাজঃ খুড়ো তোমাদের বয়স হয়েছে, দুদিন পর এমনিতেই টপকে যাবে। কিন্তু আমাদের এখনও অনেকদিন বেঁচে থাকতে হবে। তাই ওই অক্সিজেন আমাদের কাছেই থাকবে।

হাতিঃ অ্যাঁয় যত বড় মুখ নয় তত বড় কথা? আমাদের মৃত্যু কামনা করছিস?? আজ তোদের একদিন কি আমার একদিন দাঁড়া মজা দেখাচ্ছি… ( এই বলে হাতির সঙ্গে বাঘ, কুমীর ও বাজের লড়াই শুরু হয়ে যায়। বাঁদর একা সবাই কে থামাতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।)

বাঁদরঃ আরে একি করছেন আপনারা স্যার… ছাড়ুন বলছি ছাড়ুন ছাড়ুন স্যার ছাড়ুন… নিজেদের মধ্যে মারামারি করে কোন লাভ হবে না স্যার… আমরা কেউই বাঁচতে পারব না… মিলে মিশে না থাকলে এই পৃথিবীর সাথে আমরাও শেষ হয়ে যাব স্যার…… হে ভগবান কেউ কোন কথাই শুনছে না। এই জঙ্গলে আগে ছিল সহাবস্থান, নিজেদের মধ্যে অহেতুক কোন গোলযোগ হত না। কিন্তু আজ এই দুঃসময়ে আমরা সবাই নিজেদের পাশে থাকার বদলে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া মারামারি করছি। আমাদের আর ওই মানুষের মধ্যে কোন তফাৎ রইল কি স্যার? আর কত স্বার্থপর হব আমরা? এর শেষ কোথায়?

(এই হই হট্টগোল এর মাঝে বাঘের মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। সকলের আওয়াজ ছাপিয়ে যায় মোবাইলের রিং টোন। সবাই থেমে যায়। বাঘ ফোন ধরে…)

বাঘঃ হালুম(হ্যালো)!

ফোনে ওপার থেকে মানুষের গলা শোনা যায়। কথোপকথন চলতে থাকে;

মানুষঃ আজ খুশ তো বহত হোগে তুম??

বাঘঃ কোন শালা রে…???

মানুষঃ চোর কি মাম্মি জোর সে ডাঁটে; আমাদের অক্সিজেন চুরি করে আবার গলার তেজ কি!

বাঘঃ ও বুঝেছি… তা ভাইটু আবার ঢং করে ফোন করেছ কিসের জন্য ?? ও আমরা চুরি করে সাবধানে জঙ্গলে ফিরেছি কিনা খোঁজ নিচ্ছ? আহা গো মনটা আবার হালুম(খুশি) হয়ে গেল… হ্যা হ্যা হ্যা হ্যা …

মানুষঃ ঠিক তাই… আচ্ছা কালিয়া কিতনে আদমি থে রে? তোরা সকলে স্বশরীরে ফিরেছিস তো??

বাঘঃ হ্যাঁ ভাইটু আমরা সকলেই ফিরেছি। আমি- কুমীর- বাজ- বাঁদর- হরি… এই এক মিনিট হরিণ ভায়া কই??

বন্যেরা সকলেঃ তাই তো হরিণ কই গেল… ওকে তো দেখা যাচ্ছে না!

মানুষঃ আর দেখতে পাবিও না; যদিনা আমাদের কথা শুনিস! উয়ো আব হামারে কব্জে মে হ্যায়। খুব হাসি পাচ্ছিল তাই না? এবার আমরা যদি এই চুরির প্রতিশোধ নিই?

বন্যেরা সকলেঃ আমাদের বড্ড ভুল হয়ে গেছে। তোমরা দয়া করে ওর কোন ক্ষতি করো না!

মানুষঃ আমাদের অক্সিজেন ফেরত দিয়ে, নিজেদের বন্ধুকে ফিরিয়ে নিয়ে যা। এক হাত দেনা – এক হাত লেনা।

বান্দরঃ ঠিক আছে আমরা রাজি। তোমরা হরিণকে নিয়ে শহরের বাইরে এসো, আমরাও অক্সিজেন নিয়ে জঙ্গলের বাইরে যাচ্ছি।

দৃশ্যপটের পরিবর্তন ঘটে। হাত বদলের জন্য হাজির হয় উভয় পক্ষ।

মানুষঃ কই সিলিন্ডারটা কই? আগে আমাদের অক্সিজেন ফেরত দে।

বাঘঃ আহা গো, মামার বাড়ির হালুম(আবদার) যেন। আমরা অক্সিজেনটা দিয়ে দেই আর ওমনি উনি গুলি বর্ষণ শুরু করে আমাদের খতম করে দিক। অক্সিজেন আমরা লুকিয়ে রেখে এসেছি। হরিণ কে নিয়ে আমরা নিরাপদ স্থানে পৌঁছালে পর ফোন করে সিলিন্ডারের হদিশ দেবো।

 মানুষঃ না মুমকিন; হরিণকে নিয়ে পালিয়ে যাবি তোরা, আমি কি তখন আঙ্গুল চুষবো? আমিও হরিণকে সঙ্গে আনিনি, তোরা অক্সিজেন ফেরত দিলে আমরা ওঁকে ছেড়ে দেবো।

বাঁদরঃ আমরা মানুষ নই স্যার। আমাদের বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আপনাকে যায় না। আমরা কথা দিচ্ছি আপনাদের সিলিন্ডার আমরা ফিরিয়ে দেবো।

মানুষঃ একে তো চুরি করলি তাও এতটুকু লজ্জা নেই তোদের? আবার বলছিস তোদের বিশ্বাস করতে!

বাজঃ তোমাদের আছে? লজ্জা? তোমাদের জন্যেই তো আজ আমাদের এই ভাবে চুরি করতে হচ্ছে। যেভাবে তোমরা অরণ্য ধ্বংস করেছ, প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করেছ, আমাদের জন্য কি কিছু ছেড়েছ? আমরা কি তোমাদের মত কারখানায় অক্সিজেন তৈরি করতে পারি? তুমিই বল চুরি ছাড়া আমাদের অন্য কি উপায় আছে?

মানুষঃ এই একদম জ্ঞান দিতে আসবি না। মানব সভ্যতার অগ্রগতির জন্য সেসব আবশ্যিক।

কুমীরঃ পৃথিবী তো একটাই। সেটাই যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে এত বিজ্ঞান এত অগ্রগতি নিয়ে কি ধুয়ে জল খাবে? আমরা তো শেষ হয়েই যাবো, তোমরাও কি বেঁচে থাকবে ভেবেছ?

মানুষঃ ইয়ে মুঝেভি পাতা হ্যায় দোস্ত! কিন্তু জীবন যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আমাদের এই সম্পদ আহরণ করতেই হবে।

বাঘঃ করো না ভাইটু কে মানা করেছে? আমরাও তো প্রাকৃতিক সম্পদের ওপরেই বেঁচে আছি, যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু নিচ্ছি। তোমরা তো ক্ষতি করে ফেলছ। যেটুকু প্রয়োজন তার থেকে অনেক অনেক বেশি নিয়ে নিচ্ছ। যত না কাজে লাগছে অপচয় হচ্ছে ঢের বেশি।

মানুষঃ কি বলতে চাইছিস?

বাজঃ আচ্ছা সত্যি করে বলো যে বিদ্যুৎ- জল জীবন ধারণের জন্য যতটা দরকার তুমি কি তার চেয়েও বেশি অপচয় করো না?

মানুষঃ না মানে হ্যাঁ… একটু তো অপচয় হয়ই…

বাজঃ সমস্ত মানুষ যদি এই অপচয় কমিয়ে ফেলে তাহলে নিশ্চয়ই চাহিদা অনেকটাই কমে যায়?

বাঁদরঃ স্যার আপনারা অনেক জিনিস একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেন, সেগুলো বারবার ব্যবহার করার উপায় থাকা সত্ত্বেও। এগুলোও তো অপচয় স্যার। এগুলো কমানো যায় না? কিংবা রিসাইকল করা যায় না? একবার ভাবুন স্যার।

বাঘঃ সোজা কথা হচ্ছে প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন সব কিছুর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে কিংবা কমিয়ে ফেলতে হবে।

মানুষঃ কহনা বহুত আসান হ্যায়, ব্যবহারিক জীবনে সব কিছু সম্ভব নয়। আচ্ছা ধর গাড়ি চাপলে কার্বন বাতাসে যুক্ত হবেই। কিন্তু গাড়ি ছাড়া আজ মানুষের চলবে?

কুমীরঃ আরে গাড়ি চাপতে তো মানা করিনি। ধর তোমার একটা গাড়ি আবার তোমার বউ এর একটা আলাদা গাড়ি। দুটো গাড়ির খুব প্রয়োজন কি? কিংবা ধরো ছেলেকে স্কুলে পাঠাতে গেলে সবাই নিজের নিজের গাড়ি না নিয়ে গিয়ে স্কুল বাসে পাঠালেই তো হয়।

বাঁদরঃ স্যার পৃথিবী একটাই। এই পৃথিবীতে থাকতে হলে তার ভালোর জন্যও ভাবতে হবে। তবেই তো আমরা একসাথে সামঞ্জস্য রেখে বেঁচে থাকতে পারব। আপনারা চাইলেই প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার কমাতে পারেন স্যার। চাইলেই সৌরশক্তির ব্যবহার করতে পারেন। বর্জ্য পদার্থকে সারে পরিনত করতে পারেন। আপনারা চাইলে কি না পারেন স্যার…

আকাশে মেঘ করে এসছে অনেক আগেই, বৃষ্টি হতে পারে দেখে উদ্বিগ্ন হয়

মানুষঃ ঠিক আছে ঠিক আছে এসব ভেবে দেখবো; তর্ক করার সময় এখন নয়, ভালোয় ভালোয় সিলিন্ডারটা দিয়ে দে। আকাশ কালো করে আসছে, বৃষ্টি নামতে পারে। 

বাঘঃ না ভাইটু তুমি আগে হরিণকে ছাড়ো। কিছুদিন আগেই ওর দুটো ছানা হয়েছে, তুমি নিশ্চয়ই চাইবে না ওঁদের ক্ষতি হোক।

মানুষঃ ওহ ইয়ে লোক তো মুঝে পাগল হি কর দেগা। বলছি তো সিলিন্ডার পেলেই ওকে ছেড়ে দেওয়া হবে। নে নে আর দেরী করিস না, তাড়াতাড়ি সিলিন্ডারটা বের কর।

বন্যেরা সকলেঃ আমরাও তো তোমাকে বলছি যে হরিণকে নিয়ে আমরা নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে গেলেই তুমি সিলিন্ডার ফেরত পাবে।

এই চাপান উতরের মাঝেই আকাশ জুড়ে নেমে আসে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি। স্বস্তির বৃষ্টি নয়, অ্যাসিড বৃষ্টি

সকলেঃ একি আবার সেই কালো বৃষ্টি… উফফস বাবা গো… চামড়া জ্বলে গেল গো… বাঁচাও … বাঁচাও…

মানুষঃ উফস… সাঙ্ঘাতিক বৃষ্টি… এখনই আমাদের কোথাও মাথা ঢাকার জায়গা খুঁজতে হবে… নইলে সবাই মারা পড়বো…

বাজঃ এখানে কাছাকাছি মাথা ঢাকার মত কোন আশ্রয় নেই।

বাঁদরঃ না স্যার আছে! ওই যে দূরে যে বড় গাছ টা দেখা যাচ্ছে, ওর গুঁড়ির মধ্যে বিশাল জায়গা আছে। চলুন স্যার সবাই ওখানেই যাই…

সকলেঃ হ্যাঁ হ্যাঁ তাই চলো, দৌড়াও সকলে … ছুটে এসো… নাহলে মারা পড়বে… জলদি এসো…

সকলে প্রানের দায়ে দৌড়ে এসে হাঁফাতে হাঁফাতে গাছের গুঁড়িতে আশ্রয় নেয়।

বাঘঃ এই ভাইটু একটু চেপে চেপে দাঁড়াও… আমার জন্য জায়গা কর, আর একটু আর একটু… ব্যাস ঠিক আছে।

মানুষঃ আরে আরে ঘাড়ের ওপর উঠে আসছো যে? মার ডালোগে ক্যা?

কুমীরঃ বিপদের সময় আমরা সবাই এক। আমরা তোমায় কিচ্ছু করবো না। তুমি মানুষটা খুব একটা খারাপ না!

মানুষঃ থ্যাঙ্কস, তোমরাও বেশ ভালো। লেকিন আজ বাল বাল বচে; উফসস কি জ্বালা করছে… ভাগ্যিস এই গাছটা ছিল।

হটাৎ গাছ নড়ে চড়ে ওঠে যেন কিছু বলতে চায়;

গাছঃ ছিলাম বলেই আজ আবার তোমরা প্রাণে বাঁচলে; অথচ দুদিন বাদেই হয়ত আমি কাটা পড়ব। একে একে সব সবুজটুকু তোমরা মুছে দেবে এই পৃথিবীর বুক থেকে; একটুকু অক্সিজেনের জন্য করবে বিশ্বযুদ্ধ। পড়ে থাকবে কালো নিষ্প্রাণ পৃথিবী। চোখ থাকতেও তোমরা অন্ধ, বোধ থাকতেও তোমরা নির্বোধ। তোমরা শুধু নিয়েই গেলে, ফিরিয়ে দিলে না কিছুই। তোমরা গোটা সৌরজগৎ চিনলে, শুধু চিনলে না পৃথিবী। প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হয়েও শুনলে না মায়ের কান্না। তোমরা অতীতে উৎপন্ন হয়ে বর্তমানেই শেষ হয়ে গেলে, ভবিষ্যত তোমাদের নয়। হায় রে মানব জাতি

মানুষঃ আঃ বন্ধ করো এসব; আমি… আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমি অপরাধী। আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমি সুস্থ পরিবেশ রেখে যেতে পারব না। আমি স্বার্থপর, একাই নষ্ট করেছি তোমাদের সকলের জীবনের অধিকার। তোমরা সবাই পারলে আমাকে ক্ষমা করো। (কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে)

বাঁদরঃ এখনও সময় আছে স্যার। এখনও খুব দেরী হয়ে যায়নি। আপনারা কি না পারেন স্যার…

কুমীরঃ তোমরা সর্বশক্তিমান, দেখনা আর একবার চেষ্টা করে…

বাজঃ প্রকৃতির ক্ষতি না করে, প্রকৃতির সঙ্গে সমতা রেখে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে বাঁচার পথ তোমরাই আবিস্কার করতে পারবে।

বাঘঃ শুধু মনে রাখবে… এই পৃথিবী একটাই…

গাছ মানুষের দিকে একটি চারা এগিয়ে দেয়… মানুষের চোখে মুখে ফুটে ওঠে আনন্দ!  ততক্ষনে বিষবৃষ্টি গেছে থেমে। মানুষ ধীরে ধীরে উঠে, নতুন আশায় বুক বেঁধে, ফিরে যেতে উদ্যোগী হয়।

4 thoughts on “পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে

  • June 6, 2022 at 6:16 pm
    Permalink

    Boddo prokot ek nirmom sotyoke evabe sojeeb kore tulle Sayan…abhibadan!

  • June 20, 2022 at 8:58 pm
    Permalink

    ভালো লাগলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.