“ইহারা কি প্রাণঘাতী উট ?” – অঙ্কিতা দত্ত

  • লেখা- অঙ্কিতা দত্ত
  • ছবি- শুভদীপ দে ও অনুপম দত্ত

“উটগুলোর দিকে লালমোহন বাবুর মতো এ রকম হাঁ করে তাকিয়ে আছিস কেন? ভয় পাচ্ছিস? “..
মা না, সব বুঝে যায়! আচ্ছা এই যে আমি উটে উঠব, যদি উট আমায় ফেলে দেয়? কী হবে? এই ভাবতে ভাবতে গলাটা কেমন শুকিয়ে আসছে। সেটা ভয়ে না মরুভূমির এই শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য তা অবশ্য জানি না।

ছবি – অনুপম দত্ত

আজকেই সকালে আমরা সবে জয়সলমীর এসে পৌঁছেছি। আজকে বিকেলে আমাদের মরুভূমি ভ্রমণ এবং কালকে আমরা যাব সোনার কেল্লা। আজ যখন যোধপুর থেকে জয়সলমীর আসছিলাম, দুই দিকে মরুভূমি আর মাঝের রাস্তা দেখে মনে হচ্ছিল এ রকম কোনো রাস্তাতেই হয়তো ফেলুদা চেঁচিয়ে উঠেছিল, “আছে আছে, আমাদের টেলিপ্যাথির জোর আছে!”
তবে এখানের আবহাওয়াটা যে এত আলাদা, না এলে বুঝতামই না। অক্টোবর মাসেও এতো রোদ, গরম কিন্তু একটুও ঘাম হচ্ছে না! রাতে শুনেছি বেশ ঠান্ডা লাগে।
এ সব ভাবতে ভাবতেই আমাদের উটচালক এ বার উটের পিঠে উঠে পড়তে বললেন। এই রে, সেরেছে। এবার আবার ফেলুদার দেখিয়ে দেওয়া সেই পদ্ধতিতে উঠতে হবে। কিন্তু উঠতে গিয়ে কেমন যেনো সব গুলিয়ে গেলো!
যাই হোক ধরে-টরে বসলাম। উটচালককে বললাম, “ভালো করে ধরে রাখেগা তো?” এই ভাষা শুনে তিনি কেমন যেন তাকালেন আর মাথা নাড়লেন, বুঝলেন কিনা জানিনা।
উট চলতে শুরু করল। প্রথম প্রথম বেশ মজাই লাগছিল। কিন্তু একটু দূর যাওয়ার পর উটের কি হল জানি না, মনে হচ্ছিল উটটা যেন চালকের কথা শুনেছেন। তবুও ও কিছু না ভেবে চলতে লাগলাম। গুবরে পোকারা উটের বিষ্ঠা ঠেলে ঠেলে নিয়ে গর্তের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। দূরে বালিয়াড়ি দেখা যাচ্ছে আর তার ওপরে হাওয়ায় নানা রকম নকশা তৈরি হয়েছে।

ছবি- অনুপম দত্ত

দূরে সূর্যটা লাল হয়ে আসছে। আর সেই লাল রং বালির উপর পড়ে চারিদিক এতো সুন্দর লাগছিল যে আমি ভুলেই গেছিলাম সব কিছু। হঠাৎ কেমন একটা ঝাঁকুনি হল। সম্বিৎ ফিরতেই দেখি আমাদের উট দৌড়াচ্ছে এবং চালক তাকে ধরে রাখতে পারছে না।
আমি চিৎকার করে উঠলাম “এই এই ভাগতা কিঁউ?”
আর ভাগতা কিঁউ! উট তখন কোন দৌড়ের প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছে আমি জানি না! আমার তখন আর এ সব ভাবার অবস্থা নেই! আমায় যদি তখন কেউ “কি লালমোহন বাবু” থুড়ি “কি অঙ্কিতা” বলে ডাকতো আমি বোধহয় লালমোহন বাবুর থেকেও ফ্যাকাশে গলায় “অ্যাঁ” বলতাম।
আমারও তখন কুঁজোরই দরকার! কিন্তু এই উট তো থামেই না! এ কোথায় যাবে? মা তো কিছুই বলছে না! ভয় পাচ্ছেনা নাকি! নাই পেতে পারে! কিন্তু আমি তো পাচ্ছি! মা কে বললাম, “ও মা থামাতে বলো না।”
মা বলল,”এখন কি করে থামাতে বলব। ও নিজের জায়গায় পৌঁছে ঠিক থেমে যাবে। ভালোই তো কি সুন্দর দৌড়াচ্ছে! খুব জোরে তো না। ভয় পাচ্ছিস কেনো?”
কিন্তু আরও তো উট যাচ্ছে। ওরা কেউ তো দৌড়াচ্ছে না! আমি যদি সত্যিই পড়ে যাই? যা মনে হচ্ছে উটটা আমাকে আর মাকে দুজনকেই ফেলে দেবে! হাত পা ভেঙে যাবে তো! না বলতেই হবে কিছু একটা!
আবার উটচালককে বললাম, “পাকড়ো পাকড়ো! তাড়াতাড়ি পাকড়ো!” এ বার বোধহয় তিনি ভাষা বুঝলেন কোনোমতে উটকে ধরলেন! এবং তার কিছুক্ষণ পরেই আমাদের গন্তব্য এসে গেল এবং আমি আর নামার সময় কী ভাবে নামতে হবে সে সব ভুলে টুলে গিয়ে লাফিয়ে নামতে গিয়ে বালির উপর পড়লাম!
একটু লাগল। কিন্তু তাতে আমার কিছু না। উটের হাত থেকে তো ছাড়া পেয়েছি! আহারে লালমোহন বাবুর কষ্টটা এতদিনে বুঝলাম। না আর হাসব না ওই দৃশ্যটা দেখে।

ছবি- শুভদীপ দে

2 thoughts on ““ইহারা কি প্রাণঘাতী উট ?” – অঙ্কিতা দত্ত

  • December 10, 2020 at 9:49 pm
    Permalink

    Besh bhalo laglo…

  • December 11, 2020 at 8:21 am
    Permalink

    ভালো লাগলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.