যোগ কয় যাহারে

  • লেখা- কল্যাণ উবাচ
  • অলঙ্করণ- শুভ্রা হালদার

যোগ করতে আমার কোনোকালেই আপত্তি নেই । বিয়োগ করতেই বরং যত জ্বালা । লুচি , মিষ্টি থেকে মিষ্টান্ন সবই আমি নিজের মধ্যে যোগ করে থাকি । ভালভাবেই করি । কেউ ভালোবেসে দিলে তাতে না করার বান্দা আমি নই ।বিন্দুমাত্র বাদ দিই না । 
তবে এই সব যোগের ফলে ছোটোখাটো রোগ যে হয় না তা বলতে পারি না । মানে বলার মতো রোগ নয় সেগুলো । রোগের বাহুল্য । কাজেই বলাই বাহুল্য । তবে ডাক্তারের কাছে বলতে হয় । নাহলে রোগ সারে না ।  তার সাথেই যত বিস্তারিত আলোচনা আমার । পেটের যত গোপন কথা তাকেই বলি গুনগুন করে । মন দিয়ে সেইসব শুনে দাওয়াই দিতে হয় তাকে । খাওয়াই বদলে দেন তিনি আমার । প্রতিবার । আমার ব্যারামের উপর রাগ করে আরামের ব্যবস্থা করেন তিনি ।
শেষে একদিন তার ধৈর্য চ্যুতি ঘটল । ঘটনা ঘটিয়ে ছাড়লেন তিনি শেষমেশ ।” ঔষধ দেবো না তোমায় আর । কিছুতেই না । তুমি বরং যোগা কর । ” ডাক্তার নিনাদ দিলেন অবশেষে ।
আমি অবশ্য গভীর সংশয়ে পরলাম । ” যোগা করব ? আমি ?” সে তো লোকে রোগা হবার জন্য করে জানি । আমার রোগ আছে ঠিক , কিন্তু সাথে রোগাও তো আমি । আরো রোগা হলে তো দেখাই যাবে না , তার থেকে রোগে ভোগাই ভালো আমার ।
ডাক্তার কিন্ত এইবার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ । ” ওসব বললে শুনছি নে , একটা চেনা যোগা সেন্টার আছে আমার । তার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি । কাল থেকেই যাবে । ” 
যোগার মত কঠিন জিনিষের সাথে কে যোগাযোগ করতে চায় রে বাবা । তবু ডাক্তারের কথা ফেলা যায় না । এত ফলাও করে বলছেন যখন ।কাজেই যেতে হল পরের দিন । 


” বনলতা  যোগা সেন্টার ” লেখা আছে বড় করে । তার ভিতরে সেধুই । ভয়ে ভয়েই ঢুকি । 
ভিতরে একজন মহিলা বসা । ঢোলা জামাকাপড় পরা । ঢুলঢুলে চোখে দেখলেন আমাকে । ” কি রোগ ? প্রেসার ? “
অ্যা ? ডাক্তার এই গুপ্ত বাবুর সব গুপ্ত রোগ এই মহিলার কাছে ফাস করেছেন ? ফাঁসিয়ে দিয়েছেন এইভাবে ? 
” আজ্ঞে —” স্বীকার করতে হয় । ” সকাল থেকে বার তিনেক প্রেসার আসে । তার পর বিকেল বেলা অবশ্য –” 
ভদ্রমহিলার চোখ কপালে উঠল । ” কি বলছেন ? কি রোগ আপনার ? রক্তচাপ না সুগার ? “
“আজ্ঞে না , রক্তে নয় পেটে চাপ দেয় যখন তখন । আর সুগার হয় নি , তবে সুগার পেটে চালান করতে আমি অপারগ নই । দিয়েই দেখুন না কয়েকটা । “


” বাজে বকবেন না ” ভদ্রমহিলাই আমাকে বকে দিলেন ।” এখানে আপনাকে শেখানো হবে শরীরের সুস্থতা , মনের শান্তি , যাকে বলে — ইয়োগা । বুঝলেন ? “
” দেখুন,  কি বলে ইয়ে ” আমি ইতস্তত করি ।” আমি ভুরি ভুরি খাই বটে , কিন্তু ভুড়ি নেই । আর মনের শান্তি —আপনার বাড়ি কি নাটোরে ? নামতো দেখলাম বনলতা ।” আমি নামতার মতো বলি । ” আপনার টাইটেল কি সেন ? “
” কি সব বকছেন উল্টো পাল্টা ?  এই দেখুন একে বলে পদ্মাসন ” ভদ্রমহিলা বাবু হয়ে বসলেন ।কোনো পদ্ম বা আসন কিছুই নেই । ম্যাট এর উপর মট করে বসে পরলেন দেখলাম ।
” এই দেখুন ” চিত হয়ে শুয়ে পরলেন তিনি । ” একে বলে শবাসন । ” 
” এইটাই আমার পছন্দ । এটাই আমি করব রোজ । বাকি গুলো চাই না । ” ওনাকে চিত হতে দেখে আমি চিৎকার করি । চিহ্নিত করি  আসনটাকে । 
সামান্য কথা । নিজের পছন্দ বলেছি , উনি রেগে গেলেন । ” তখন থেকে বাজে বকছেন । আর একবার করলে বের করে দেবো । যা বলছি করুন । “এরপর , বলাই বাহুল্য উনি বলতে থাকলেন । নানান কাম করিয়ে আমার ঘাম ছুটিয়ে ছেড়ে দিলেন । 
লাট খেতে খেতে বেরোলাম । এর নাম যোগা ? যোগ কিছুই নয়,  সব বিয়োগ হয়ে গেলো মধ্য থেকে । শরীরে প্রোটিনের অভাব বোধ করলাম । কাজেই গোল করে পাকানো একটা রোল খেতে হল , ভিতরে গোটা চারেক প্রোটিনের টুকরো ।
জযগুরু , একেই বলে আসল যোগ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.